অনলাইন ডেস্ক :: জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের নির্ধারিত সময় চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গত মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করার কোনো অনুরোধ পায়নি।
জেলা পরিষদ আইন অনুসারে, এই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় হচ্ছে পরিষদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ছয় মাস।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, জেলা পরিষদ আইনে সংশোধন আসছে। জাতীয় সংসদে ওই সংশোধনী পাস হওয়ার আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্ভব নয়। পরবর্তী সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে ১৬ জানুয়ারি। এই অধিবেশনে ওই সংশোধনী পাস হবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। কে এম নুরুল হুদার নির্বাচন কমিশন আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিচ্ছে। তাদের পক্ষে আর কোনো নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। এ অবস্থায় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও জেলা পরিষদে আগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই বহাল থাকতে পারেন।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতে, এবার দেরিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কারণেও যথাসময়ে জেলা পরিষদ নির্বাচন করা যাচ্ছে না। কারণ, জেলার সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), পৌরসভা, উপজেলা ও ইউপির জনপ্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার এবং সদস্য পদের প্রার্থী। সাধারণ ভোটারদের এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ভোটারদের বড় অংশ হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ইউপি নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন হলে নবনির্বাচিতরা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটি গণতন্ত্রের অবমাননা। সরকারের নির্বাহী বিভাগ সঠিক সময়ে ইসিকে এই নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এরশাদ আমলে গঠিত জেলা পরিষদে সংসদ সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। আওয়ামী লীগ নেতারাই মূলত প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান।
প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সে সময় তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ২১টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া নির্বাচনে ৬৯ জন সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ও ১৬৬ জন সাধারণ সদস্যও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ভোলা ও ফেনী জেলায় একক প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের সব সদস্য প্রার্থী বিনা ভোটেই নির্বাচিত হন।
নির্বাচিত সদস্যরা শপথ নেন ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। তাঁদের মেয়াদ চলতি মাসের মাঝামাঝি শেষ হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে চেষ্টা-তদবির শুরু করেছেন।
ইসিসচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউপির নির্বাচন শেষ করে জানুয়ারির দিকে জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে। কিন্তু ইউপি নির্বাচনই এখনো শেষ হয়নি।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনে এখনো ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়নি। অনুরোধ পাওয়ার পর ইসির ওপর দায়িত্ব বর্তায়। এ ছাড়া বর্তমান ইসির হাতে বেশি সময় নেই। আমাদের এক মাস সময়ের মধ্যে আর কোনো নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী প্রস্তাব সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়ার পর পর্যালোচনার জন্য জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়েছে। এই সংশোধনী সংসদে পাস হলে জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: